ইকবাল আহমেদ লিটন: রাজনীতিতে পঁচন ধরেনি। পঁচন ধরেছে আমাদের মানসিকতায়। রাজনীতিতে পঁচন ধরার জন্য সাধারণ মানুষ কখনোই দায়ী নয়। রাজনীতির উপরতলার কিছু মানুষ নামের অমানুষগুলো নিজেদের স্বার্থে এক এক সময় বিশেষ করে সব নির্বাচনের আগে এক এক রকম যুক্তি দাঁড় করায়, আর সাধারণ মানুষ তার পক্ষে বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যায়। এমনি করে বিভক্ত হয়ে জনগণ অস্থিরতায় ভোগে। আর্দশের নামে ভন্ডামী করে ওরা প্রতিনিয়ত পার পেয়ে যায়। নিজের আসনকে পাকাপোক্ত করে সুখানুভব করে। আদর্শ এদের কাছে কচু পাতার পানি বাংলাদেশে যেটা অধিকতর সম্ভব।
যাইহোক, আজকের সমাজ ব্যবস্থা, আর আমাদের পাশ্চাত্যের মত আধুনিক হতে চাওয়ার সাথে একটা গভীর সম্পর্ক আছে। পশ্চিমারা উন্নত জীবন যাপন করে, আজ আমরা তা স্যাটেলাইট চ্যানেলের মাধ্যমে দেখতে পারি যা আমাদের খুবই প্রলুব্ধ করে। এই জীবন ব্যবস্থার উন্নত ধাপে উত্তরনের জন্য আমরা বেপরোয়া হয়ে উঠি আর কত সহজে ঐ ধাপে উঠা যায়। আর তা করতে গিয়ে আমরা বেছে নেই অর্থ উপার্জনের অবৈধ পন্থা (অবশ্যই ব্যতিক্রম আছে)। আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো সরকারিদলের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে থাকা। এর মধ্যে একটা অংশ দলের প্রতি আনুগত্য ও কমিটমেন্টের জন্য নিজের জীবন যৌবনে অনেক ত্যাগ, নির্যাতনের শিকার হন দল যখন বিরোধী দলে থাকে।
রাজনীতির এই দুষ্ট চক্রে সবচেয়ে বেশী ক্ষতির শিকার হন যারা ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এসে। তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে ফেলেদেন চরম ঝুকির মধ্যে। এদের অধিকাংশ রাজনীতিতে যুক্ত হন হলের একটি সিট পাওয়ার আশায়, কেউ কেউ বাই চয়েজ রাজনীতিকে বেছে নেন। আমার এক কাছের ভাই বলেছেন ৯৫% এরও বেশী দলের আদর্শ ভালবেসে ছাত্র রাজনীতি করেন না। তারা যাদের অধিনস্থ তাদের দাপুটে হল লাইফ স্টাইল অনুসরণ করে নিজে সেই স্থানে যেতে চাই। একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। যে ছেলেটা সহজ-সরল, ধূর্ত ভাইয়েরা তাদেরকে সামনের সারিতে নিয়ে আসে, আর হীরক রাজার মত তাদের মগজ ধোলাই করে ধীরে ধীরে বিভিন্ন আপরাধে জড়িয়ে ফেলে। এদের কেউ কেউ সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়ার পূর্বে ফিরে আসতে পারে, বাকিরা আর আলোর পথ খুজে পায়না। ধীরে ধীরে তারা হয়ে পড়ে অ্যাডিক্টেড ও দাগী অপরাধী। তারা হয়ে পড়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আজ্ঞাবহ। এদেরকে যেমন খুশী ব্যবহার করা হয় অপরাধ সংগঠনে। আমার সেকেন্ড দেশ আয়ারল্যান্ডও আধুনিক হয়েছে মেধা, মনন, সৃষ্টিশীলতার, পরিশ্রমে। আমরা আধুনিক হচ্ছি চুরি, বাটপারি, অসততায়, দালালী, চাঁদাবাজি, ঘুষ বানিজ্যে। আর যারা বাই চয়েস আদর্শিক রাজনীতি করতে চাই, তারা সম্মুখীন হয় ভয়াবহ প্রতিকূলতার। কেউ এই প্রতিকূল সাগর পাড়ি দিতে পারে, কেউ পথ বদলে নেয়। যা কিছু নীতি, আদর্শ আজকের বাজারে বিদ্যমান এই বিরল প্রজাতির অবদান (ব্যতিক্রম প্রযোজ্য)। পৃথিবীর সব ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষ থাকে যারা শুধু নিজের চরকায় তেল দেয়। এরাই আজকের আমলা, উর্ধ্বতন কর্মচারী (ব্যতিক্রম প্রযোজ্য)। এই তিন পক্ষের মধ্যে প্রবল জেদ তাদের জাতে উঠতে হবে, সেটা যে পন্থায়'ই হোক। শুরু করে টাকা উপার্জনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। সেখান থেকে আয়ারল্যান্ড বাদ যায় নাই। সভ্য দেশের মাঝে অসভ্যতার প্রতিক হয়ে উঠেছি আমরা বাঙালী যা আমাদের শুরুতে পঁচন ধরেছে। আর এখন পচে-গলে চারপাশের দুর্গন্ধ এতটা বিকট হয়েছে যে শিক্ষকের কাছে ছাত্র চাঁদা দাবী করে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে এই পচা-গলা সমাজকে কে পরিচ্ছন্ন করতে পারে? উত্তর একটাই দেশরত্ন শেখ হাসিনা তবে তাকে গঠন করতে হবে শক্তিশালী আদর্শিক টিম। শুদ্ধতাই হোক আমাদের স্বপ্ন, নৈতিকতাই হোক আমাদের আদর্শ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক: ইকবাল আহাম্মদ লিটন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, সদস্য সচিব আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগ ও উপদেষ্টা সম্পাদক দৈনিক অভিযোগ বার্তা
Post a Comment