মুজাহিদ হোসেন, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি,
আব্দুল জলিল একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি বাংলাদেশ সরকারের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। সেখানে বিরোধী দলের চিফ হুইপও ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জলিলের জীবন ছিল খুবই বৈচিত্র্যময়। প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত নানা আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করেছেন।
এক নজরে আব্দুল জলিল পুরো নাম: মোহাম্মদ আব্দুল জলিল জন্মঃ ২১ জানুয়ারি ১৯৩৯ ডাক নামঃ নওগাঁর জলিল, আব্দুল জলিল, মুক্তিযোদ্ধা জন্মস্থানঃ চকপ্রাণ, নওগাঁ নিজ এলাকাঃ নওগাঁ মৃত্যুর তারিখ: ৬ মার্চ ২০১৩ মৃত্যু স্থানঃ সিঙ্গাপুর মৃত্যুকালে বয়সঃ ৭৪ লিঙ্গঃ পুরুষ ভাষাঃ বাংলা ধর্মঃ ইসলাম জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী পেশাঃ রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দলঃ ব্যবসায়ী নির্বাচনী এলাকা: নওগাঁ-৫ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাতাঃ মার্কেন্টাইল ব্যাংক।
স্ত্রীঃ জেসমিনা জলিল, রেহানা জলিল সন্তানঃ ৪ ছেলেঃ নিজাম উদ্দিন ছেলেঃ জুমায়েত জলিল জুম্মা জলিল মেয়েঃ ডা. মৌমিতা জলিল জুলি জলিল জেসী সংসদ সদস্যঃ ১৯৭৩, ১৯৮৬, ২০০১, ২০০৮ বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেনঃ ১৯৯৬-২০০১ ম্যাট্রিকুলেশন পাশঃ ১৯৫৭ মেয়েঃ ডা. শরমিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হনঃ ১৯৬০ সম্মান সম্পন্ন করেনঃ ১৯৬৩ (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেনঃ ১৯৬৪ ( রাষ্ট্রবিজ্ঞান)।
মোহাম্মদ আব্দুল জলিলের প্রাথমিক জীবন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল জলিলের প্রাথমিক জীবন কাটে নওগাঁতে। আব্দুল জলিল জন্মগ্রহণ করেন নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার চকপ্রাণ গ্রামে ১৯৩৯ সালের ২১ জানুয়ারি। নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার চকপ্রাণ গ্রামে তার জীবনের শৈশব কাটে। তার বাবা ব্যবসায়ী ফয়েজউদ্দিন আহমেদ ও মাতা গৃহিণী জারিনা ফায়েজ। তার দাম্পত্য সঙ্গী ছিলেন জেসমিনা জলিল ও রেহানা জলিল। মো জলিলের মোট ৪ সন্তান রয়েছে তারা হলেন ডা. মৌমিতা জলিল জুলি, ডা. শরমিনা জলিল জেসী, নিজাম উদ্দিন জলিল ও জুমায়েত জলিল জুম্মা। তার ছেলে মেয়ে সবাই উচ্চশিক্ষিত।
শিক্ষাজীবনঃ
বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং বীর মুক্তিযুদ্ধা মোহাম্মদ আব্দুল জলিলের শিক্ষাজীবন শুরু স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি নওগাঁর স্থানীয় স্কুল থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন। তিনি তথকালীন ম্যাট্রিকুলেশন বর্তমান ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন নওগাঁ কে. ডি. সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আগে ১৯৫৭ সালে। পরবর্তিতে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা সম্পন্ন করেন রাজশাহীর প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজশাহী কলেজ থেকে। তিনি ১৯৬৩ ও ১৯৬৪ সালে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পর্ণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে। তারপর তিন উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যান। তিনি ইংল্যান্ড এর রাজধানী লন্ডন যান আইন বিষয়ে পড়াশুনা করার জন্য। কিন্তু ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এর সময় তিনি পড়াশোনা শেষ না করেই দেশের প্রয়োজনে দেশে ফিরে আসেন। সেখানেই তার শিক্ষা জীবন সমাপ্ত হয়।
আব্দুল জলিলের মুক্তিযুদ্ধে অবদানঃ ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় ৭ নম্বর সেক্টরের প্রধান সংগঠক ও যোদ্ধা আব্দুল জলিল লন্ডন থেকে দেশে ফিরে সরাসরি আন্দোলনে যোগ দেন। মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক মোঃ জলিল মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মার্চ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিলে তিনি তার নিজ এলাকা নওগাঁ ও উত্তরাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের একসাথে করেন ও তাদের ঐক্যবদ্ধ রাখেন। তিনি ৭৪ জন মুক্তিযোদ্ধা ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে ভারতে যান এবং সেখানে তিনি বাঙ্গালীপুর, মধুপুর, কামারপাড়া, পারিল্লাসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় অনেক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প পরিচালনা করেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য শিলিগুড়ির পানিঘাটায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিতেন। মুক্তিযোদ্ধ শেষ হওয়ার পর স্বাধীন বাংলাদেশে হাজার বছরের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে তার অঞ্চলের জেনারেল হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাকে সম্মান জানিয়ে নওগাঁ শহরের 71 ফুট লম্বা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয় যেটি বিজয় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ নামে পরিচিত। মুক্তিযোদ্ধে অবদানের জন্য তিনি তার এলাকা সহ সারা বাংলাদেশে একজন মহান ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।
মোহাম্মদ আব্দুল জলিলের রাজনীতিক জীবনঃ
মোহাম্মদ আব্দুল জলিলের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ছাত্রজীবনে বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে ১৯৫০ সাল থেকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোহাম্মদ আব্দুল জলিল প্রথমবার সংসদ সদস্য নিচাচিত হয় ১৯৭৩ সালে তৎকালীন রাজশাহী-৬ আসন থেকে। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলিগের একজন প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। বাকশালের সময় তিনি নওগাঁর গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭৫ সালে। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হন ১৯৮১ সালে। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর এবং ১৯৮২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের সময় তিনি গ্রেপ্তার হয়। তিনি নওগাঁ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় ১৯৮৪ ও ১৯৮৮ সালে। তারপর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলিগের প্রার্থী হয়ে ১৯৮৬, ২০০১, ২০০৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। তিনি আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, মুখপাত্র, মন্ত্রীত্ব,উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রেসিডিয়াম সদস্য, বিরোধী দলের চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন।
মৃত্যুঃ কিডনির সমস্যায় এবং হৃদরোগে আক্রান্ত মোঃ জলিল চিকিৎসার জন্য ২০১৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুরে যান। তিনি ৬ মার্চ ২০১৩ সিঙ্গাপুরের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন।
Post a Comment