নন্দা কৃষি খামারে ইউপি সদস্য সোহেলের ত্রাসের রাজত্ব



চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ 

নাম নন্দা কৃষি খামার। মালিক নর্থবেঙ্গল সুগার মিলস লিমিটেড। খামারটি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বামনদিঘী গ্রামে। ৩৭৩ একর আয়তনের এই বিশাল কৃষি খামারটি স্থানীয় কৃষক ও শ্রমিকদের কাজের প্রাণকেন্দ্র বলা হয়ে থাকে। এই খামারটি ঘিরেই নিজের রাজত্ব কায়েম করেছেন স্থানীয় শলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও যুবলীগ নেতা শফিকুল আলম সোহেল। 

সংশ্লিষ্ট জানায়, জমি দখল কেন্দ্র করে গত দুই দিনে কৃষি খামারের পাহারাদারদের সাথে ইউপি সদস্য এবং তাঁর বাহিনীর লোকজনের কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে খামার পরিচালক খায়রুজ্জামানসহ অন্তত পাঁচ জন আহত হয়েছেন। 

নন্দা কৃষি খামার সূত্রে জানা যায়, নর্থবেঙ্গল সুগার মিলসের নন্দা কৃষি খামারের বিস্তীর্ণ জমিতে সাধারণত সুগার মিলস নিজেরাই আখ চাষ করেন। এক জমিতে এক মৌসুম আখ চাষে করে এক বছর ফেলে রাখা হয়। তখন স্থানীয় কৃষকেরা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী লিজ নিয়ে অন্য ফসলের চাষ করেন সেখানে। ইউপি সদস্য সোহেল সেখানে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে শ্রমিক সর্দার হিসাবে কাজ করতেন। 

খামারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, ২০২১ সালে ইউপি নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হবার পর থেকে সোহেল খামারের শ্রমিক সর্দার পদে আর কাজ করেন না। তবে কাজ না করলেও নিয়মিত হাজিরার বেতন তুলতেন তিনি। পাশাপাশি ইউপি সদস্য হয়ে জোরপূর্বক খামারের আট একর জমি দখলে নিয়েছেন তিনি। কৃষি খামারের নিভৃত এলাকায় আখ ক্ষেতে তার লোকজন দিয়ে মাদকের কারবার শুরু করেন তিনি। নন্দা খামারের ইনচার্জ কার্যালয় দখল নিয়ে নিজ অনুসারীদের নিয়ে মাদক সেবন করতেন। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর বাহিনী নিয়ে আরো ছয় একর জমি দখল নিতে চেষ্টা করলে খামারের পাহারাদারদের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে। খামারের ইনচার্জ খামারের কার্যালয়ে প্রবেশ করতে নিষেধ করলে তাকেও বেধড়ক পেটান ওই ইউপি সদস্য। 

নন্দা কৃষি খামারের ইনচার্জ মোঃ খায়রুজ্জামান বলেন, দৈনিক হাজিরায় শফিকুল ইসলাম সোহেল শ্রমিক সর্দার হিসাবে কাজ করতেন। এখন কাজ তো করেই না উল্টো জোরপূর্বক খামারের একের পর এক জমি নিজের দখলে নিচ্ছেন। নিজ বাহিনীর লোকজন নিয়ে পুরো খামার এলাকায় নিজের রাজত্ব কায়েম করেছে। খামারের কার্যালয়েও মাদকের কারবার শুরু করেছে। কয়েক দফা পুলিশ এনেও পরিস্থিতি ঠিক হয়নি। জমি দখলে পাহারাদাররা বাঁধা দেওয়ায় নিজ বাহিনী নিয়ে হামলা করেছে। তার অবৈধ কাজে বাঁধা দেওয়াতে কেউ খামারে কাজ করতে পারছেনা। এমনকি আমাকেও মেরে ফেলার উদ্দেশ্য হামলা করা হয়েছে। নিজের প্রাণ বাঁচাতে আমি ইতিমধ্যে থানায় সাধারণ ডায়েরি করে রেখেছি। 

নন্দা কৃষি খামারের পাহারাদার সুজাত উদ্দিন ও শফিকুল ইসলাম বলেন, সোহেল মেম্বারের ভয়ে আমরা খামারের কোনো জমিতে নামতে পারছিনা। বুধবার থেকে জমি দখল করে আবারও ধান রোপণ শুরু করেছে। গত দুদিন যতবারই নিষেধ করতে গিয়েছি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার বাহিনীর লোকজন আমাদের উপরে হামলা করেছে। একটুর জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছি। তাকে আইনের আওতায় না নিয়ে আসা পর্যন্ত আমরা খামারের জমিতে নামতে পারছিনা। 

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য শফিকুল আলম সোহেল বলেন, খামারের আট একর জমি বৈধ ভাবে লিজ নিয়েছি আমি। অবৈধ ভাবে আমি কোনো জমি দখল করিনি। চাপে পড়ে মাদক সেবন করলেও মাদকের ব্যবসা করিনা। পাহারাদার কিংবা খামার ইনচার্জকে মারধর করিনি। আমার লোকজন হয়তো একটু হুমকি ধামকি দিয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, ইউপি সদস্য হবার কারণে আমার বেতন বন্ধ করা হয়েছে। খামারে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রয়োজনে ইউপি সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করবো, তবুও খামার ছাড়বোনা।

এ বিষয়ে চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলম বলেন, কৃষি খামারের ইনচার্জ সাধারণ ডায়েরি করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। গত দুদিন ধরেই পুলিশ সেখানে টহল দিচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

0/Post a Comment/Comments