পুঠিয়া প্রতিবেদক: নাটোর নলডাঙ্গা থানার মির্জাপুর এলাকা থেকে অপহরণ করে নিয়ে এসে, সাধারণ মানুষ ও আত্মীয়-স্বজনের বাধার মুখে পড়ে রাজশাহীর পুঠিয়ায় অপহরণকারীরা দুই রাউন্ড গুলি ছুড়ে চম্পট দিয়েছে বলে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল আনুমানিক সন্ধ্যা ৭ টার দিকে পুঠিয়া ত্রীমহণি মোড় তাহেরপুর রোড সংলগ্ন অটোরিকশা স্ট্যান্ডে এ চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনাটি ঘটে।
সরেজমিনে ঘটনার তদন্তে গিয়ে উক্ত স্থানে প্রত্যক্ষদর্শীর নিকট থেকে জানা যায়, হঠাৎ একটি হায়েচ প্রাইভেট গাড়িকে কয়েকজন ব্যাক্তি মিলে আটক করার চেষ্টা চালায়। এবং তারা সেই হায়েচ গাড়িটির ভিতরে দেখতে চায়। কিন্তু তৎক্ষনাৎ হায়েচ থেকে একজন জানালা দিয়ে হাত বের করে দুই রাউন্ড গুলি ফায়ার করে। ফায়ারের বিকট শব্দ শুনে উপস্থিত আটককারী ব্যাক্তিরা পিছু হটে। এই সুযোগে অপহরণকারীরা হায়েচ গাড়ি নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে নাটোর রোড বরাবর ছুটতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পরেই আটককরার জন্য যারা চেষ্টা করে তারা জানতে পারে যে, অপহরণ হওয়া ব্যাক্তিকে ঝলমলিয়া ও শেনভাগ রোডের মাঝে এক জনশুন্য স্থানে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অপহরণ হওয়া ব্যক্তি নাটোর মাঝ দিঘা এলাকার আবু কাসেম শাহর ছেলে ব্যবসায়ী আবু রায়হান শাহ। তিনি বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার কব্জির মাঝখানে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। বাম পায়ের গিরা পর্যন্ত জখম হয়ে মাংস উঠে গেছে। বর্তমানে তিনি আগের চেয়ে অনেকটা ভালোও আছেন।
খবর পেয়ে আত্মীয়স্বজনরা উক্ত স্থানে পৌঁছে তাকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে। পরে পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানায় অপহরণ হওয়া ব্যাক্তির হাত ও পা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ৩১ নং ওয়ার্ডের অর্থ-সার্জারী ডিপার্টমেন্টে চিকিৎসাধীন আছেন।
উক্ত ঘটনার বিস্তারিত জানতে অপহরণকারীর জামাই মেহেদী হাসানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার শ্বশুর মোঃ আবু রায়হান শাহকে নলডাঙ্গা থানার মির্জাপুর নামক স্থান থেকে অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা প্রথমে একটি হায়েচ গাড়ি নিয়ে গিয়ে আমার শ্বশুরের সামনে থামিয়ে দুইজন ব্যাক্তি হায়েচ থেকে নেমে তারা নিজেদের পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর লোক বলে পরিচয় দিয়ে গাড়িতে উঠতে বলে। তিনি উঠতে রাজি না হওয়ায় তাকে জোর করে হায়েচে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এমন খবর আমার কাছে আসা মাত্রই আমার শ্বশুরকে উদ্ধার করতে, আমরা কয়েকজন মিলে পুঠিয়া ত্রীমহনি বাজার তাহেরপুর মোড়ে অবস্থান নেই এবং ওই হায়েচ গাড়িটি আসা মাত্রই আমরা আটক করার চেষ্টা করি। পরে তারা আমাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে প্রায় তিন রাউন্ড গুলি ছুড়ে খুব দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ বিষয়ে থানায় কোনও অভিযোগ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, থানায় গিয়ে অভিযোগ করা হবে। অভিযোগের প্রস্তুতি ও চলছে।
অপহৃত আবু রায়হান শাহর স্ত্রীর ভাই সাহান শাহ তিনি বলেন, আমার ভগ্নিপতিকে, কে বা কারা পুলিশ পরিচয় দিয়ে ৬ জন ব্যক্তি একটি হায়েস সাদা গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায়। পরে পুঠি য়া এলাকায় আমাদের আত্মীয়-স্বজনকে ফোন দিলে তারা সেখানে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। পরে ভগ্নিপতিকে সেন ভাগে ফেলে রেখে যায় আমরা তাকে বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছি। বাম পা একদম ফ্যাকচার হয়ে গেছে। খুব মারধর করেছে।
অপহরণ হওয়া ব্যক্তি আবু রায়হান শাহ তিনি বলেন, আমি মির্জাপুর বাজারে চা খাচ্ছিলাম হঠাৎ দুজন ব্যক্তি এসে আমার নাম ঠিকানা পরিচয় জানতে চায়। পরে দু দিক থেকে আমার শরীরে পিস্তল ঠেকিয়ে আমাকে তুলে নিয়ে আসে। রাস্তার মাঝে আমাকে অমানব িক অত্যাচার করে। আমার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। এই ঘটনা জানা জানি হলে, আমার আত্মীয়-স্বজনরা আমাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে এক পর্যায়ে পুঠিয়া মোড়ে আমাকে তাদের হাত থেকে উদ্ধার করার চেষ্টা করলে সে সময় তিন রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। পরে আমাকে সেন ভাগ নামক স্থানে ফেলে রেখে চলে যায়। আমার ধারনা সন্ত্রাসীরা নাটোরের হতে পারে। আমার কাছে থাকা প্রায় ৯-১০ হাজার টাকা তারা নিয়েছে। যাবার সময় আমাকে হুমকি দিয়ে চলে গেছে।
এদিকে এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে নলডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি একটা মিটিংয়ে আছি। আমার নলডাঙ্গা থানার মধ্যে এমন কোন ঘটনা ঘটে নি। আর আমি জানিও না।
এ বিষয়ে আরো জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। অপহরণকারীরা আমাদের পুঠিয়া তাহেরপুর সড়কটি ব্যবহার করেছে। পরে বাধার মুখে পড়ে পুঠিয়ার শেষ সীমানা সেনভাগ নামক এলাকায় অপহৃত ব্যক্তিকে ফেলে রেখে যায়।
Post a Comment