বাঘায় ঈদে মাংসের জন্য সঞ্চয় সারাবছর।




এম ইসলাম দিলদার 
বাঘা(রাজশাহী)

রাজশাহীর বাঘা উপজেলাধীন বঙ্গবন্ধু চত্বরের উত্তর মিলিক বাঘা গ্রামের দিলয়ারা,মিতা,শিখা মাংস সীমিত গড়ে তোলেন।৩/৪ বছর আগে মহিলাদের একত্র করে নিজ এলাকায় গড়ে তোলেন সাপ্তাহিক ও মাসিক ‘মাংস সমিতি’। প্রথমে সঞ্চয় টাকা দিয়ে গরু কিনে মাংস ভাগ-বাটেরা করে নেওয়া হয়েছিলো। উদ্যোগটি ধীরে ধীরে স্থানীয় লোকজনের আস্থায় আসে। গরিব-অসহায়দের জন্য মাংস কেনা বরাবরই কঠিন। তারা সমিতির সদস্য হয়ে চাঁদা দিয়ে বছরজুড়ে সঞ্চয় করেন। জমানো টাকা দিয়ে ঈদ উৎসবে গরু কিনে জবাই করে সবাই মাংস ভাগ করে নেন। এতে কম দামে পরিবারের সবাই মাংস খেতে পারেন।

বর্তমানে বাঘাতে গরুর মাংসের দাম ৭৫০-৮০০ টাকা কেজি। নিম্ন-মধ্যবিত্তদের কাছে মূল্যবান খাদ্য হিসাবে ধরা মাংসের। ক্রমাগতভাবে গরুর মাংসের দাম বাড়তে থাকায় তারা পরিবার নিয়ে ঈদ আনন্দ করতে পারেন না। এ কারণে মাংসের জন্য সঞ্চয় সারাবছর  সমিতির উদ্যোগ এখন বাঘা উপজেলার ব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে বাঘা চকনারায়পুরের খাইরুল, কাজল সমিতির সদস্যসংখ্যা ৫৩ জন। মোঃ কাজল সরকার বলেন, মোট সঞ্চয় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার। ইতোমধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছে তারা। বাকি টাকা দিয়ে বাজার থেকে গরুর  মাংস ক্রয়করে ভাগ করে নেবো।

তিনি আরও বলেন, গত বছরও আমরা একেক সদস্য ৭ কেজি করে মাংস পেয়েছি। আমাদের সমিতির সদস্যরা হলেন রিকশা ও ভ্যানচালক, দরিদ্র, চাকরিজীবী, নিম্নবিত্ত লোকজন। যারা বেশি দামে মাংস খাওয়ার কথা ভাবতেই পারেন। কিন্তু সমিতির সদস্য হয়ে এখন সহজেই খেতে পারছেন।

এমন উদ্যোগ উপজেলার অধিকাংশ গ্রামে মাংস সমিতি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু চত্বরে অবস্থিত মসজিদের পেশ ইমামের পরিবারসহ মিতা,দিলিয়ারা, শিখা মিলে ২১ জন মহিলা বাড়ীতেই মাসে মাসে সঞ্চয় করতো টাক।   যেটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সমাজের সুশীল প্রতিনিধিরা।

বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভাধীন  গোচর, কুশাবাড়িয়া, পিয়াদাপাড়াসহ  বিভিন্ন গ্রামে  শতাধিক সমিতি গড়ে উঠেছে। সমিতির সদস্যরা সপ্তাহে ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে জমা দেন। কেউ দেন ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। অনেকে আবার বছরের পুরো টাকা একত্রে দেন। এভাবে টাকা জমিয়ে ঈদুল ফিতরের আগে গরু কেনা হয়। সেই গরু জবাই করে মাংস ভাগ করে নেন সমিতির সদস্যরা। চামড়া বিক্রির টাকা ফান্ডে জমা থাকে। এতে দরিদ্র পরিবারগুলো আনন্দ নিয়ে ঈদ উদযাপন করে এবং তাদের আর্থিক চাপও কমে যায়।

একটি সমিতির সদস্য মোঃআমিরুল আলী (রাজমিস্ত্রী) বলেন, প্রতি সপ্তাহে ১০০ টাকা করে মাংস সমিতির ক্যাশিয়ার কাজল সরকারের কাছে। গরুর মাংসের যে দাম, তাতে আর মাংস খাওয়া আর হবে না। সমিতির মাধ্যমে এবার প্রায় সাত কেজি মাংস পেয়েছি। পরিবারের পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনের জন্য মাংস নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না। বিগত বছরগুলোয় এমন সময়ে ধার করতে হয়েছে।
 কষ্ট করে প্রতি সপ্তাহে যা জমিয়েছি, তা দিয়েই এবার ঈদে তৃপ্তিসহকারে মাংস খেতে পারবো ইনশাআল্লাহ। 

বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে ভালো। নিজেরা বছর ব্যাপী সঞ্চয়ী টাকা দিয়ে ঈদের আগে গরু কিনলে তাদের  সমস্যা হচ্ছে না। উপরন্তু ঈদে ছেলেমেয়েদের নিয়ে সবাই ভালো খাবারও খেতে পারলো। মাংস সমিতি শুধু মাংসের জন্য নয়, এতে এলাকার মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরিতে সহায়ক হয়েছে বলে আমি মনে করি।

0/Post a Comment/Comments