পুঠিয়ায় এলজিইডির এলসিএস প্রকল্পে নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য




পুঠিয়া প্রতিনিধি:

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর লেবার কন্ট্রাক্ট সোসাইটি (এলসিএস) প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়কের মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন কাজের কর্মী নিয়োগে (মহিলা) ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

গ্রাম অঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষদের এগিয়ে নিতে সরকার চালু করে লেবার কন্ট্রাক্ট সোসাইটি (এলসিএস) প্রকল্প। ওই প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ প্রায় একজন, কাজ করে অন্যজন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সরেজমিনে গেলে বেরিয়ে আসে নানান রকম অনিয়ম। ওই প্রকল্পের আওতায় পুঠিয়া উপজেলায় ২৭ জন নারী  ও ২ জন পুরুষ সুপারভাইজার ভুট্টু ও আ: মান্নান নিয়োগ পায়। এদের মধ্যে একজন এলসিএস কর্মী পুঠিয়া উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরে কম্পিউটার অপারেটরে চাকরি করা মেহেদী হাসানের বোন মোছা: রিভানা বেগম। যদিও রিভানা এই প্রকল্পের আওতায় কাজ করেন না। তার আইডি কার্ড বিক্রি হয়ে যায় ৫০ হাজার টাকায়। সাথে প্রতিবছরে ছেড়ে দিতে হয় দুই মাসের ১৮ হাজার টাকা বেতন। শুধু তাই নয়, বর্তমানে রিভানা বেগমের আইডি কার্ড দিয়ে কাজ করেন শিউলি দাস, নীলা রানীর আইডি কার্ড দিয়ে কাজ করে অঞ্জনা, দিপালীর আইডি কার্ড দিয়ে কাজ করেন রূপালী রানী, জমেলা বেগম সহ একজনের আইডি কার্ড ব্যবহার করে কাজ করছেন এমন অনেকেই। এলসিএস সুপারভাইজার মান্নান ও (ভুট্টু) এতসব এলাহী কাণ্ডের মূল হোতা বলে অভিযোগ উঠে। অন্যদিকে এসব বিষয়ে নজরদারি ও তদারকির দায়িত্বে উপজেলা প্রকৌশলী থাকলেও নেই কোনো পদক্ষেপ।

এসব বিষয়ে শিউলি দাস বলেন, আমি অন্যজনের আইডি দিয়ে কাজ করি। তার বিনিময়ে কয়েক বারে আমার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার এর বেশি টাকা। এছাড়াও প্রতিবছর ৯ হাজার করে দুই মাসের ১৮ হাজার টাকা ছেড়ে দিতে হয় তাদেরকে।

সীতা রানী বলেন, এই কাজের আমি নতুন শোভা নেত্রী হয়েছি, আমার কাছ থেকেও নিয়েছে মোট ৬০ হাজার টাকা। আবার দুই মাসের বেতন ছেড়ে দিতে হয়। ইঞ্জিনিয়ার কে এসব কথা বললে চাকরি থাকবে না। তাই ভয়ে বলি না।

অঞ্জনা বলেন, আমিও অন্য আরেকজনের আইডি দিয়ে কাজ করি। আমার ওপর দায়িত্ব দেওয়া আছে আমার আশপাশে যারা আছেন তাদের কাছ থেকে টাকা তুলে দিতে হয়। এছাড়াও ২০০ টাকা দিয়ে ১০ দিন ছুটিও পাওয়া যায়। এসব বললে আমাদের চাকরি থাকবে না।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এলসিএস সুপারভাইজার নাদের আলী ভুট্টু বলেন, আমাদের আর কয় টাকা বেতন দেয়। এসব করে কোনো মতে চলি। তোমাদের জন্য টাকা রেখেছি ওটা নিয়ে যেও।

এবিষয়ে দপ্তরে কর্মরত কম্পিউটার অপারেটর মেহেদী হাসান তার বোনকে চাকরি নিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন আমার বোন রিভানা এলসিএস কর্মী হলেও কখনোই কাজে যোগ দেননি তার কার্ডে অন্যজন কাজ করছেন।

এবিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান বলেন, অস্বীকার করে বলেন রিভানা কাজ থেকে ইস্তফা দিয়েছে। পুঠিয়া উপজেলায় আমি যোগদানের পর থেকে সকল ধরনের অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করেছি। আমার এখানে কোনরকম অনিয়ম দুর্নীতির স্থান নেই। এই প্রকল্পের আওতায় আগের সময় নানান রকম ঘুষ লেনদেন হতো বর্তমান সময়ে এখন আর নাই।

উল্লেখ্য যে, সাংবাদিকদের অনুসন্ধান চলাকালে ঘটনার টের পেয়ে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে এলসিএস প্রকল্পে কাজ করা কর্মীদের ডেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি করাতে চেয়েছিলেন। এছাড়াও এলসিএস প্রকল্প থেকে নিজ ইচ্ছায় রিভানা খাতুন ইস্তেফা দেয়।

আরো জানাজায় এলজিইডির এই বছরের তৈরিকৃত বহু রাস্তা ইতিমধ্যেই অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এনি বহু পত্রপত্রিকায় নিউজও প্রকাশ হয়েছে, তবুও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি ও মন্ত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় ব্যবস্থায় নেওয়া হয়নি অফিসের কার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে জনমনে।

0/Post a Comment/Comments